best counter

শীতের সৌন্দর্য ও শীতকালীন পিঠা

শীতের সৌন্দর্য ও শীতকালীন পিঠা

by mirajamin
5/5 - (1 vote)

ভোরবেলায় কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে নিঃশব্দে এসে হাজির হয় শীতকাল

শীতকাল!
বড় আশ্চর্য এক মাধুর্য নিয়ে আসে শীতকাল। ভোরবেলায় কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে নিঃশব্দে এসে হাজির হয় শীতকাল, সেইসাথে সন্ধ্যার মলিন সূর্যের সাথে হারিয়ে যায়।
আমাদের ষড়রিতুর দেশে শীত কাল খুবই কম স্থায়ী। পৌষ ও মাঘ মাস নিয়ে শীতকাল। শীতকালে স্থায়িত্ব কম হলেও আমাদের দেশে এই সময়ে খুব উপভোগ্য হয়।

নানারকম শীতকালীন উৎসবে মেতে ওঠে আমাদের দেশ। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো পিঠা উৎসব।
ভোজন রসিক বাঙ্গালী শীতকালে নানা রকম পিঠা তৈরীর আয়োজন করে থাকে। স্থান ভেদে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম ও ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি হয়।

অঞ্চলের চেয়ে গ্রাম অঞ্চলে পিঠা র বৈচিত্র বেশি। শহর অঞ্চলের মানুষ পিঠায় স্বাদ থেকে বেশির ভাগ সময় বঞ্চিত হয়। অনেক কিছু কিনতে পাওয়া গেলেও তার স্বাদ গ্রাম বাংলার মত হয়না।
প্রায় শতাধিক বৈচিত্র রয়েছে গ্রামবাংলায় তৈরি পিঠায়।

দুধ পুলি , ক্ষীর পুলি পাটিসাপটা পিঠা , চিতই পিঠা, নারকেলের নাড়ু , মোয়া সহ আরো অনেক রকম পিঠা তৈরি হয় গ্রাম বাংলায়।
গ্রাম বাংলার ভোজন রসিক বাঙালি প্রাকৃতিক ভাবে জৈব উপাদান দিয়ে সুস্বাদু পিঠা তৈরি করে।

এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হলো দুধ পুলি। শীতকালে খেজুরের গুড় এবং চাউলের গুড়া পাওয়া যায়।
খেজুর গাছের গায়ে হাড়ি বেঁধে রাখা হয়। নির্দিষ্ট সময় পর হাড়ি রসে ভরে যায়। সেই রস দীর্ঘসময় জাল করে সুস্বাদু খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়।

বাংলার কৃষকেরা জমিতে যে ফসল ফলায়, তা থেকে পাওয়া যায় শস্যদানা। তা ঢেঁকিতে গুঁড়ো করে তৈরি হয় চাউলের গুড়া।
আর পিঠা তৈরি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো গরুর দুধ। গ্রাম বাংলার মানুষেরা গৃহপালিত পশু হিসেবে গরু পালন করে থাকে। প্রাকৃতিক ভাবে ভেজালমুক্ত গরুর দুধ কেবলমাত্র গ্রামবাংলায় পাওয়া সম্ভব।
সব রকম উপকরণ সংগ্রহ করার পর বাংলার বধুরা নেমে পড়ে পিঠা তৈরীর কাজে।

পিঠে তৈরীর উৎসব এ বাংলা যেন আরও রঙিন হয়ে ওঠে। মাঠে মাঠে সবুজ ফসল ,ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির ধুম, সেই সাথে বাংলার মানুষের কর্ম ব্যস্ততা। বাংলা যেন সত্যিই অপরূপ সাজে সজ্জিত।
বাঙালির প্রিয় পিঠের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য হলো চিতই পিঠা। সেইসাথে পাটিসাপটার এবং ক্ষীরপুলি ও মানুষের মন কাড়ে।প্রাচীনকাল থেকে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলায় ভাষণ ফুল তো প্রচুর এবং সেই ফসলের টানে উদরপূর্তি করার উদ্দেশ্যে এদেশে যুগে যুগে বাসা বেধেছে বহু মানুষ।

কালের বিবর্তন চলেছে প্রকৃতির খেয়ালে এবং সেইসাথে পরিবর্তন হয়েছে প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক পরিবেশ। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি গ্রামবাংলার মানুষের মন। ৫০বছর আগে মানুষ যেমন শীতকালের পিঠা উৎসবে মেতে উঠতো এখনো ঠিক তেমনি বাংলায় উৎসব হয় পিঠা তৈরীর।
শীতকালে সকালে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো ভাপা পিঠা।
ভাপা পিঠা তৈরি হয় চাউলের গুড়ার নারকেল এবং খেজুরের গুড়ের পাটালি দিয়ে।
এপিঠ আর আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ভাপা পিঠা খেতে ভালোবাসে না।

কুয়াশা ভাঙা ভোরে ঘুম থেকে উঠে গ্রাম বাংলার মানুষ ভাপা পিঠা খেয়ে মুখে হাসি ফোটায়।
শহরাঞ্চলে ভাপা পিঠা বিক্রি হয়। তুমি শেখাতে গ্রাম বাংলার মতো স্বাদ থাকে না।
কারণ গ্রাম বাংলার মানুষ উনুনের পাশে বসে গল্প গুজবে মেতে ওঠে এবং পিঠা খায়। এই অনুভূতিটা হাজার টাকার বিনিময়েও কেনা সম্ভব নয়।
এক গ্রামের মানুষ অন্য গ্রামে আপ্যায়িত হয় পিঠা খাওয়ার জন্য।
গ্রাম বাংলার কয়েকটি জনপ্রিয় পিঠা হলো ক্ষীর পুলি পিঠা। ঘন দুধের সাথে চাল এবং গুড় মিশিয়ে পিঠা তৈরি হয়।

শহরের হাজার হাজার কর্মব্যস্ত মানুষ শীতকালে অবকাশে যায় গ্রামের শুধুমাত্র পিঠা খাওয়ার জন্য। প্রত্যেকেই চায় নিজের গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সাথে সময় কাটানো এবং পিঠা উৎসবে মেতে ওঠা। আর তাই শীতকালে গ্রাম বাংলার যেন এক নব রূপ ধারণ করে।
যুগ যুগ ধরে এই পিঠা উৎসব চলে আসছে।

যতদিন এ দেশের মানুষের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন শীতকালে মানুষ পিঠা উৎসবের দেশকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করে তুলবে। কেননা বাঙালি সবসময়ই ভোজন রসিক।
বাঙালির পছন্দের আরেকটি পিঠা হলো পাটিসাপটা। এই পিঠাটি সব এলাকায় খুবই বিখ্যাত। এমনকি এই পিঠা গ্রাম থেকে শহরে বিক্রি হয়। পাটিসাপটা পিঠা দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমনই সুস্বাদু। একবার এই পিঠা খেলে সেই স্বাদ যেন মুখে সারা জীবন লেগে থাকে।

এছাড়া আমাদের দেশে নকশি পিঠা ও একটি জনপ্রিয় পিঠা। নকশি পিঠার মূলত দেখার সৌন্দর্য, সেই সাথে মানুষের রসনার তৃপ্তিও মেটায়।
নকশী পিঠা তৈরি হয় নারকেলের পুর দিয়ে। নানা রকম ছাঁচ তৈরি করে থেকে নারকেল এবং খেজুরের গুড়ের পুর দিয়ে তৈরি হয় নকশি পিঠা। এরপর তার ঘন দুধে ডোবানো হয়। কোন কোন এলাকায় এই পিঠা কুশলী পিঠা নামে পরিচিত। এছাড়া রয়েছে সেমাই পিঠা। সেমাই পিঠা তৈরি হয় চালের আটার ছোট ছোট করে সেমাইয়ের আকারে কেটে। কিছুটা সেমাই এর মত দেখতে বলে এই পিঠার নাম সেমাই পিঠা।
নাম না জানা এমন আরও বহু পিঠা আছে যেগুলো গ্রামবাংলায় তৈরি হয় কিন্তু অতটা পরিচিত নয়।
তবে সব রকম পিঠা শীতকালে সুস্বাদু। শীতকাল সময়টাই উৎসবের জন্য। বাঙালি পিঠা উৎসবে মেতে উঠল গ্রাম বাংলার নব রূপ ধারণ করে।

গাছে গাছে পাখি, মাঠের ফসল, সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলা যেন শীতকালের আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। আর নানা রকম পিঠা তৈরীর ব্যস্ততার এই সুন্দর্যকে যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
এভাবেই চলবে যুগ যুগ ধরে বাংলার পিঠা উৎসব। প্রতিবছর শীতকাল বাঙালিকে উপহার দিবে পিঠা তৈরীর কিছু সুন্দর মুহূর্ত যার শহরে বসে উপভোগ করা সম্ভব নয়।

https://mohajagotik.com/en/2023/01/21/3523/

https://mohajagotik.com/en/2023/01/13/3413/

You may also like

Leave a Comment

Adblock Detected

Please support us by disabling your AdBlocker extension from your browsers for our website.