আমাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত। উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। বয়স্ক মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। আমাদের দেশে বহুল পরিচিত একটি সমস্যা হলো উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কের স্ট্রোক হয় যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
তবে কিছু নিয়ম মানার মাধ্যমে ভয়াবহ এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করে সুস্থ জীবন যাপন করা যায়।
উচ্চ রক্তচাপ মূলত খাদ্যতালিকার অনিয়মের কারণে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ, অধিক চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ,বিশেষ করে কোলেস্টেরল জাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে দেহের রক্তচাপ বেড়ে যায়।
সুতরাং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায়। এছাড়া আরো কিছু সহজ ও ঘরোয়া উপায় আছে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর।
চলুন জেনে নিই সহজ কিছু উপায় যা অনুসরণ করা অপেক্ষাকৃত সহজ এবং এই অনুযায়ী জীবন যাপন করলে শুধু উচ্চরক্তচাপ নয় অন্যান্য খারাপ অসুখ থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।
১. উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার একটি কারণ হলো দুশ্চিন্তা। কর্মজীবন বা পারিবারিক জীবনে নানারকম সমস্যা জনিত কারণে আমাদের দুশ্চিন্তা হয়ে থাকে। এছাড়া কাজের চাপ, অধিক অবসন্ন জীবন-যাপন করা, বিনোদনের অভাব জনিত কারণে আমাদের জীবনের একঘেয়েমি আসে। অধিক কর্ম চাপের কারণে একজন মানুষ পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার সময় পায়না। তাছাড়া দুশ্চিন্তাজনিত কারণে অনেকের ঘুম হয় না। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
সুতরাং উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য আমাদেরকে হাসিখুশি প্রফুল্ল জীবন যাপন করতে হবে। কাজের মাঝে বিরতি দিতে হবে। দুশ্চিন্তা বা অন্য কোনো সমস্যা পরিবারের সাথে আলোচনা করতে হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
২. গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, ডিমের কুসুম,সকল প্রাণী যাদের দুইয়ের অধিক পা উপস্থিত , এদের দেহে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল ও চর্বি জাতীয় উপাদান থাকে। চর্বি জাতীয় উপাদান দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের উচিত এ ধরনের খাবার পরিহার করা। আর অনুষ্ঠান বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে এসব খাবার গ্রহণ করলে , সাথে সাথে এক টুকরো লেবু খেয়ে নিতে হবে। এছাড়া এক গ্লাস পানিতে হালকা লবন মিশিয়ে খেয়ে নিলে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে।
৩. অনেক সময় অলস জীবন যাপন করলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তোমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ অবসর সময় কাটায় শুধুমাত্র বসে, মোবাইল ফোনে বা ইন্টারনেটে সময় দিয়ে। যখন এসব প্রযুক্তি ছিল না, তখন মানুষ অবসর সময় কাটাতো পরস্পরের সাথে গল্প গুজব এবং খেলাধুলা করে। খেলাধুলা দেহের রক্ত চলাচল ক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে । বর্তমানে মানুষ অলস জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ায়, তাদের গ্রহণকৃত খাদ্য ঠিকমতো পরিপাক হয় না। ফলে দেহে রক্তের চাপ বেড়ে যায় এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এজন্য আমাদের সবার নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলার অভ্যস্ত হওয়া উচিত। তবে খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ব্যায়াম করা যাবে না। খাবার খাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘন্টা পর ব্যায়াম করতে হবে।
৪. এছাড়া যাদের রক্তচাপ অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে যায়, তাদের জন্য শুধুমাত্র ঘরোয়া পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। ডাক্তারের পরামর্শমতো ঔষধ সেবন করার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ একবার খাওয়া শুরু করলে পরবর্তীতে তা কোনভাবেই বাদ দেয়া যাবে না। কারণ একবার ওষুধ গ্রহণ করলে শরীর তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। এজন্য গুরুতর রোগীদের নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে।
৫. সপ্তাহে কমপক্ষে একবার রক্তচাপ মাপার ব্যবস্থা করতে হবে। স্ফিগমোম্যানোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে রোগীর রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হবে । রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। অতিরিক্ত বেড়ে গেলে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি প্রাকৃতিক উপায় হল তেঁতুল খাওয়া। উপায়টি অত্যন্ত কার্যকর। রোগীর রক্তচাপ যদি হঠাৎ বেড়ে যায়, তাহলে এক গ্লাস পানিতে এক টুকরো তেতুল ভালোভাবে মিশিয়ে তা খেয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতি শুধুমাত্র হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রক্তচাপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নিয়মিত এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে থাকলে এসিডিটি জনিত সমস্যা হতে পারে। তবে এটি একটি কার্যকর প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং উপাদানগুলো সহজলভ্য।
খাদ্যতালিকায় শাকসবজি ছোট মাছ রঙিন ফলমূল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে যাতে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে। প্রতিদিন নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ করতে হবে। একসাথে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে না। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে গ্রহণ করতে হবে।
সর্বোপরি নিয়মমাফিক জীবনযাপনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। হাসিখুশি প্রাণবন্ত ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। এবং উচ্চ রক্তচাপ ভয়াবহ পর্যায়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ মুক্ত খাবার খেতে হবে। এছাড়া একঘেয়েমি জীবন যাপন না করে, পরিবার-পরিজনকে সময় দিতে হবে এবং সুস্থ জীবনে অভ্যস্ত হতে হবে।