এলার্জিজনিত নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিরোধের উপায়
আমাদের শরীর প্রতিকূল পরিবেশের মুকাবিলা করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টাকে বলা হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন। আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ প্রচেষ্টার পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়। আমাদের ইচ্ছার উপরে এটা নির্ভর করে না। আমাদের শরীর অনেক সময়ে ক্ষতিকর নয় এমন বস্তু কেউ ক্ষতিকর ভেবে বসে। ফলে যে কোন জিনিসের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে উঠে। শরীরের এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে এলার্জি বলে।
এলার্জির উপসর্গগুলো হলো হাঁচি কাশি, চোখ ফুলে যাওয়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ খুলতে সমস্যা, চোখের লাল ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। এলার্জিক রাইনাইটিস দুই ধরনের হয়ে থাকে। যখন কোন ব্যক্তি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এলার্জি হয় তখন তাকে সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিস বলে। অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের লক্ষণগুলো হলো ঘন ঘন হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের তীব্র ব্যথা অনুভব করা।
এলার্জির আরো একটি প্রকারভেদ হলো পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস। যখন কোন মানুষের সারা বছরই অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তখন তাকে পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস বলে। পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস কতটা তীব্র না। এই রোগের উপসর্গগুলো সাধারণ সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতই।স্থায়িত্ব অনেক বেশি এবং ভয়াবহতা কিছুটা কম। এই রোগের খুবই পরিচিত একটা উপসর্গ হলো শ্বাসের সঙ্গে বাসের মতো আওয়াজ হওয়ার এবং ঘন ঘন কাশি। বাচ্চাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।কারণ বাচ্চাদের শরীর খুবই সংবেদনশীল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।ঠান্ডা জনিত সমস্যায় আক্রান্ত থাকতে পারে।
এলার্জির সমস্যা অনেক সময় রক্তের গ্রুপের ওপর নির্ভর করে। আমরা প্রতিদিনের পুষ্টির জন্য দুধের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই পুষ্টিকর দুধ অনেক সময় আমাদের এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে গরুর দুধে এলার্জি সমস্যা বেশি। চিকিৎসাধীন গরুর দুধ খেলে অনেক সময় অ্যালার্জি হতে পারে। যাদের রক্তের গ্রুপ এ, তাদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু খাবারে এলার্জি হয়ে থাকে। যেমন গরুর মাংস, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, রাজহাঁসের মাংস, ঘন দুধ, মিষ্টি আলু, বেগুন, জলপাই,আম, ডিম, কোয়েল পাখি, মাখন, কমলা ইত্যাদি খাবার এ সকল গ্রুপের মানুষের জন্য এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাদের রক্তের গ্রুপ বি,তাদের জন্য সতর্ক থাকতে হবে কিছু খাবার থেকে যেন এলার্জি সমস্যা না হয়। যেমন: হাঁসের মাংস, পেস্তা বাদাম, কাঁকড়া, টমেটো, টক দই, নারিকেল, কুমড়া, আইসক্রিম, ব্লু চিজ ইত্যাদি খাবার থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
যাদের রক্তের গ্রুপ এবি, তারা তিলের তেল, পোস্তদানা, সূর্যমুখী বীজ, আইসক্রিম, মুনা কলা পেয়ারা নারকেল ইত্যাদি খাবার থেকে দূরে থাকবে। এলার্জি কোনো রোগ নয় বরং এটা দেহের একটি সংবেদনশীল অবস্থা। এলার্জি অনেক সময় ত্বকের ও হতে পারে। ত্বক ফুলে যাওয়া ,লাল চাকা দেখা দেওয়া, ফুসকুড়ি বের হওয়া, চুলকানি হওয়া, ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এলার্জি সমস্যা সবার জন্য একরকম নয়। অনেক সময় ভিন্ন পরিবেশে ত্বক অভিযোজিত হতে পারে না। ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয় এলার্জি। আমাদের ত্বক খুবই সংবেদনশীল। ত্বক যদি অনুকূল পরিবেশ না পায় তাহলে ত্বক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আর এই প্রতিরোধমূলক অবস্থার বহিঃপ্রকাশই হলো এলার্জি।
এলার্জি সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে আমাদের অবশ্যই এলার্জিজনিত খাবার পরিহার করতে হবে। কিছু কিছু খাবারের সবারই এলার্জি হয়ে থাকে। বেগুন টমেটো গরুর মাংস পুঁইশাক ইত্যাদি খাবারে প্রায় সবার এলার্জি হয়। তাছাড়া ধুলাবালির সংস্পর্শে আমাদের ত্বকে ছোট ছোট ব্যাকটেরিয়া জন্মে। এই ব্যাকটেরিয়ার চলাচলে তকে সৃষ্টি হয় এলার্জি। এলার্জি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার থাকা। কারণ এলার্জি সৃষ্টির মূল কারণ হলো নানা ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া।যখন আমরা অপরিষ্কার থাকি তখন দেহতাকে খুব সহজেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেয় এবং বংশবৃদ্ধি করে।
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ হলো নোংরা দেহ।এজন্য এলার্জি সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে আমাদের সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।প্রতিদিন গোসল করতে হবে এবং সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার মাথায় সাবান শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এলার্জি ঘটিত খাবার পরিহার করতে হবে অনেকের অধিক ঠাণ্ডা পরিবেশে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়। আমরা অনেকেই দেখি শীতকালে এলার্জিতে বেশি আক্রান্ত হয়।যাঁদের ত্বক ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রতি সংবেদনশীল তাদের শীতকালীন এলার্জি দেখা দিতে পারে।
এমন অবস্থায় হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে হবে। এবং সবসময় গরম কাপড় পড়তে হবে। ত্বক যেন কোনোভাবেই অধিক ঠাণ্ডা পরিবেশে সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঠিক একইভাবে অনেকের গরম পরিবেশেও অ্যালার্জি হতে পারে। গরম পরিবেশে আমাদের ত্বকে ঘাম হয় এবং ময়লা জমে। ফলে এলার্জির জীবাণু সহজেই জন্ম নিতে পারে। অর্থাৎ গরমকালেও আমাদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সতর্ক থাকতে হবে। শরীর কখনোই ধুলোবালির সংস্পর্শে আসতে দেয়া যাবে না। আর ধুলোবালি লাগলেও সাথে সাথে তা পরিষ্কার করতে হবে। এলার্জি অধিক ভয়াবহ মনে না হলেও, এলার্জির মাত্রা চরম পর্যায়ে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এজন্য আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।