মেয়েদের তলপেটের ব্যথা কেন হয় এবং কী করবেন
পৃথিবীর কোন মানুষই শারীরিক জটিলতার ঊর্ধ্বে নয়। প্রত্যেক মানুষেরই কোনো না কোনো শারীরিক সমস্যা হয়েছে। বলা চলে কেউই পুরোপুরিভাবে শারীরিক সুস্থ নয়।
বিশেষ করে মেয়েরা একটু বড় হওয়ার সাথে সাথেই নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা যায়।মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা হল তলপেটে ব্যথা। বর্তমানে মা-বোনদের একটি ভয়াবহ এবং পরিচিত সমস্যা হলো এই তলপেটে ব্যথা। তলপেটে ব্যথার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করার কারণে আমাদের দেশের মেয়েদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতার সচেতনতা খুবই কম। এ কারণে নানা রকম জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে।
তলপেটে ব্যথা কোন রোগ নয়, এটি স্বাভাবিকভাবে হতে পারে। প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের ঋতুস্রাব দেখা দেয়। এই সমস্যা হলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম দুই তিন দিন খুবই তলপেটে ব্যথা থাকে। ঋতুস্রাব সমস্যা হলে তলপেটে একঘেয়ে ব্যথা অনুভব হয় । এই সমস্যাটি মেয়েদের স্বাভাবিক ভাবেই হয়ে থাকে।
এই রকম ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে, হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। পানি হালকা কুসুম গরম করে তা হট ওয়াটার ব্যাগে ভরে, বাঘের মুখ ভালো ভাবে লাগাতে হবে। এরপর ব্যাগটি তলপেটে আলতো করে চেপে ধরতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে যেন মুখ ভালোভাবে লাগানো থাকে। মুখ খোলা থাকলে পানি বের হয়ে অঘটন ঘটতে পারে। এছাড়া ব্যথার পরিমাণ বেশি হলে ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করতে হবে।
এছাড়া মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হওয়ার একটি কারণ হলো জরায়ুতে ঘা হওয়া। মেয়েদের জরায়ু একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গা। এর যত্ন না নিলে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। জরায়ুতে ঘা হলে তার চিকিৎসা না করলে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। জরায়ুতে ঘা হওয়ার একটি কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করা। আমাদের গ্রাম গঞ্জের মেয়েরা পরিছন্নতা সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নয়। মাসিক সমস্যা দেখা দিলে তারা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করার পরিবর্তে একই কাপড় বারবার ব্যবহার করে থাকে। এতে নানারকম জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে জরায়ুতে ঘা সৃষ্টি হয়। জরায়ুতে ঘা একটি অতি পরিচিত রোগ। যে মহিলার বয়স 50 এর উপরে, তার জরায়ুতে ঘা হলে সর্বোত্তম উপায় হল জরায়ু কেটে ফেলা।পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করলে অনেকটা ব্যথার উপশম হয়। এজন্য সবার আগে পরিচ্ছন্ন জীবন নিশ্চিত করতে হবে।
মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হওয়ার আরও একটি কারণ হলো খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া। অনেক সময় কম খাওয়ার অভ্যাস জনিত কারণে পাকস্থলীর খাদ্য ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে একটু বেশি খাবার খেলে পেটে ব্যথা অনুভূত হয়। এ ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। খুব বেশি জটিলতা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং ছোটবেলা থেকেই একটু একটু করে বেশি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
মেয়েদের তলপেটে সমস্যার কোনো অবহেলা করার মতো বিষয় নয়। কি সমস্যা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শমতো ঔষধ সেবন করতে হবে।
এবং কিছু জনসচেতনতা বাড়াতে হবে । মেয়েদের বাল্যবিবাহ বিষয়টা এ ধরনের ব্যথার জন্য অনেকটাই দায়ী। এজন্য গ্রামাঞ্চলের বাবা মা দের সচেতন হতে হবে এই ব্যাপারে।
বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে তাদের সন্তানের ব্যাপারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতে হবে।তলপেটে ব্যথা হওয়ার কারণ গুলো জেনে রাখতে হবে এবং তা প্রতিরোধে সবসময় সচেষ্ট থাকতে হবে।
স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমিয়ে আনতে হবে যেন তা সবার জন্য সহজলভ্য হয়। মেয়েদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং,কোনরূপ জটিলতা দেখা দিলে লজ্জা না করে অবশ্যই মা-বাবা অথবা অভিজ্ঞ চিকিৎসক কে জানাতে হবে।
তবেই একটি ব্যথাহীন সুস্থ জীবন নিশ্চিত হবে।