ইসলামের সাথে জীবনের সম্পর্ক
ইসলাম হলো মহান আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত জীবন বিধান। ইসলামের সাথে জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি মানুষ সহ সবকিছু সৃষ্টিকর্তা। তিনিই একমাত্র উপাস্য। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য জীবন বিধান দিয়েছেন। মহান আল্লাহর বাণী লিপিবদ্ধ আছে পবিত্র কোরআন শরীফে।
একজন মানুষ ইহকাল ও পরকালের জীবনে কিভাবে সফলকাম হতে পারে সে উপায় সম্পূর্ণভাবে বর্ণিত আছে পবিত্র কুরআনে।
এবং কুরআনের প্রতিটি বাণী বিজ্ঞানসম্মত। কালের বিবর্তনে বিজ্ঞান অনেক কিছুই উন্মোচন করতে সক্ষম হচ্ছে। এবং বিজ্ঞান কুরআনের কাছে হার মানতে বাধ্য। কারণ বিজ্ঞান নতুন নতুন যেসব প্রযুক্তি আবিষ্কার করছে,কল্যাণকর ও অকল্যাণকর উপায় গুলো ব্যাখ্যা দিচ্ছে, সেগুলো বহু পূর্বেই মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে বর্ণনা করেছেন।
মহান আল্লাহ বান্দার কল্যাণের জন্য সমস্ত উপায় কুরআনে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন। কিছু উদাহরণের মাধ্যমে তা প্রকাশ করা যায়।
প্রথমত বলতে হয় নামাজের কথা। প্রতিটি মুসলমানের জন্য দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরয অর্থাৎ অবশ্য পালনীয়। নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট বান্দার চরম আনুগত্য প্রকাশ পায়। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার মাধ্যমে মুসলিম বাংলার মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে। মহান আল্লাহর কাছে আমরা এক একজন দাস বা গোলাম। তা প্রকাশ করার একমাত্র উপায় হল নামাজ।
নামাজ পড়ার পদ্ধতি মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাকবীরে তাহরীমা রুকু সিজদা সহজ কিছু ধাপে নামাজ পড়তে হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় এটা হল সবচেয়ে উপকারী ব্যায়াম। নামাজের মাধ্যমে দেহের প্রতিটি অঙ্গের সুষ্ঠু সঞ্চালনা হয়। সবচেয়ে উত্তম ব্যায়াম হলো নামাজ। নামাজের মধ্যে উঠা-বসা রুকু করার মাধ্যমে দেহের প্রতিটি অঙ্গ নাড়াচাড়া করে। হলে অঙ্গগুলো ভালো ও সুস্থ ভাবে সঞ্চালিত হয়। দিনে পাঁচবার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে যেমন বান্দা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ঠিক তেমনি বান্দার শরীর সুস্থ থাকে।
একটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান হল যাকাত।যাকাত দেয়ার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর ওপর ধোনির ভালোবাসা ও সহমর্মিতা প্রকাশ পায়। সমাজের মধ্যকার বিভেদ কমে যায়। আমাদের সমাজে এমন কিছু দরিদ্র মানুষ আছে যারা টাকার অভাবে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসায় থেকে বঞ্চিত। যদি ধনিক শ্রেণীর মানুষ তাদের কিছু অর্থ ও সম্পদ দান করে, তাহলে তাদের জন্য নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কিছুটা সহজ হয়ে যায়। আমাদের বাস্তব জীবনের ক্ষেত্রে যাকাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এছাড়া সমাজে চুরি ডাকাতি ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধ মূলক কাজ কমে যায়। মহান আল্লাহতালার যাকাতকে ধনীদের জন্য পালনীয় ইবাদত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এটি দরিদ্র শ্রেণীর ওপর ধনীদের কোনরকম দয়া বা অনুগ্রহ নয়, বরং এটি মহান আল্লাহ প্রদত্ত দরিদ্রদের অধিকার। যাকাত দান এর মাধ্যমে একজন ধনী মানুষের অন্তর কৃপণতার কলুশতা থেকে মুক্ত হয়। মানুষের মনে দয়া মায়া বৃদ্ধি পায়। মনীষী মানুষের সহমর্মিতা ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।ইসলামের প্রতিটি বাণী আমাদের বাস্তব জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক।
এরপরে বলতে হয় রোজা বা সাওম এর কথা। বর্তমানে বিজ্ঞান এ বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়েছে। দীর্ঘ এক মাস সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য থেকে নিজেকে দূরে রাখার মাধ্যমে মানুষ রোজা পালন করে থাকে। মহান আল্লাহ কর্তৃক বিধান এটি। একমাস সাওম পালনের মাধ্যমে মানুষের শরীর থেকে খারাপ অসুখ-বিসুখ ও অন্যান্য রোগ জীবাণু দূরীভূত হয়। বছরের একটি মাস এভাবে রোজা পালন করলে মানুষকে কোনরকম দুরারোগ্য রোগ আক্রমণ করতে পারে না। মহান আল্লাহ এটি আমাদের জন্য ইবাদত হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মুসলিমরা হাসিমুখে এক মাস রোজা পালন করে থাকে। সেইসাথে তারা মহান আল্লাহর প্রতি তাকওয়া বা ভীতি প্রদর্শন করে। আল্লাহতালা এতে খুশি হন। এটি আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত কারণ এতে আমাদের শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণু দূর হয়ে যায়।
ইসলামের প্রতিটি বাণী মানুষের জন্য কল্যাণকর। প্রতিটি বিধান আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত। একজন মুসলমান হিসেবে এসব বিধান পালন করে মানুষ বাস্তব জীবনে লাভবান হয়। সেইসাথে পরকালে তার জন্য রয়েছে পরম শান্তি ময় জান্নাত। এছাড়া ইসলামী শরীয়তে আমাদের দুটি উৎসব রয়েছে। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা পালনের মাধ্যমে মুসলিমগণ উৎসব অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এটি আল্লাহ প্রদত্ত আমাদের জন্য পবিত্র হালাল উৎসব।ঈদ পালনের মাধ্যমে মানুষের মানুষের ভালোবাসার সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই একসাথে আনন্দ করার সুযোগ পায়। সমাজের মধ্যকার বৈষম্য দূর হয়। অর্থাৎ ইসলামী শরীয়ত মানুষের বাস্তব জীবনের সাথেই সম্পর্কিত এবং মানুষের জীবনের জন্য কল্যাণকর। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতিটি বান্দাকে সমানভাবে ভালোবাসেন।কল্যাণের জন্য এসব নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। প্রতিটি বান্দার উচিৎ সঠিকভাবে এসব নিয়ম পালন করা। তাহলে একই সাথে ইহকাল ও পরকালের জীবনে সুখ শান্তি লাভ করা সম্ভব।