প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায়
আমরা অনেকেই আমাদের প্রচুর ওজন নিয়ে চিন্তা গ্রস্ত। কাজকর্ম চলাফেরা ও অন্যান্য কাজ বিঘ্নিত হয় অতিরিক্ত ওজনের কারণে। এছাড়া ওজন বেশি হলে দেখতে মানুষকে দৃষ্টিকটু লাগে।দৈনন্দিন কাজকর্ম অতিরিক্ত ওজনের কারণে সমস্যাগ্রস্ত হয়। মোটা শরীর নিয়ে চলাফেরা করা যেমন কঠিন ঠিক তেমনি লোকসমাজে লজ্জার মুখে পড়তে হয়।
আমরা অনেকেই ওজন কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নানারকম ঔষধ খেয়ে থাকি।তবে সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা কাজে দেয় না। অনেক ক্ষেত্রে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যেমন চুল পড়ে যাওয়া, মুখের ব্রণ ওঠা, শরীরে নানা রকম চর্মরোগ দেখা যাওয়া, বয়স না বাড়লেও মেস্তা দেখা যাওয়া ইত্যাদি।
শরীরের ওজন বেড়ে গেলে, কম বয়সেই চামড়া ঝুলে যায় এবং বয়স্ক দেখতে লাগে।
সুতরাং আমাদের জেনে নেয়া প্রয়োজন ওজন কমানোর কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি। এ সমস্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করতে কোন রকম অর্থ ব্যয় করতে হবে না বরং ঘরে বসে বুদ্ধিমত্তার সাথে ওজন কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
চলুন জেনে নেই প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায়:
ওজন কমানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল খাবার খাওয়ার নিয়ম মেনে চলা। যাকে বলা হয় ফুড কন্ট্রোল। অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরাও প্রথমত এই উপায়টি বলে থাকে।
- খাদ্যতালিকায় তেল চর্বি জাতীয় খাবার, ঘি মাখন, গরুর মাংস খাসির মাংস চিংড়ি মাছ কাঁকড়া ইত্যাদি খাবার কম রাখতে হবে। এসব খাবার অধিক পরিমাণ কোলেস্টেরল ধারণ করে। কোলেস্টেরল হলো চর্বি জাতীয় পদার্থ যা যকৃতে জমা হয়।
- কোলেস্টেরল জাতীয় খাবার কম খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় না।
- খাদ্যতালিকায় শাকসবজি ছোট মাছ ডাল ইত্যাদি খাবার বেশি রাখতে হবে।
- একবারে প্রচুর খাবার খাওয়া যাবেনা। বরং নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া যেতে পারে। শরীরের ওজন বেড়ে গেলে অনেক সময় ডায়াবেটিস জাতীয় রোগ সৃষ্টি হতে পারে। ডায়াবেটিস নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকেরা এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন।সারাদিনের নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার নির্ধারণ করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং ঠিক একই পরিমাণ খাবার সারাদিনে অল্প অল্প করে খেতে হবে।
- অতিরিক্ত ওজন ধারী মানুষের সাধারণত বেশি ক্ষুধা লাগে। তাদের জন্য ভালো উপায় হল পেঁপে জাতীয় সবজি বারবার খাওয়া। পেঁপে শসা লাউ ইত্যাদি জাতীয় খাবার পানি প্রধান। অর্থাৎ এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণ পানি দ্রবীভূত থাকে। এসব খাবার খেলে যেমন ক্ষুধা নিবারণ হয় ঠিক তেমনি মানুষের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- আমাদের প্রায় সবারই ফাস্টফুড যেমন পিজ্জা বার্গার স্যান্ডউইচ চিকেন ফ্রাই জাতীয় খাবার পছন্দ। বাড়ির বাইরে বের হলেই আমরা কমবেশী এসব খাবার খেয়ে থাকি। কারণ এসব খাবার মুখরোচক। এবং আমরা বাঙালিরা খাদ্য রসিক। এসব খাবার দেখে আমরা লোভ সামলাতে পারিনা। আর এই ধরনের খাবার বেশি খাওয়ার কারণে আমাদের স্থূলতা দেখা যায়। এ ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে। এসব খাবার যেমন ওজন বাড়ায় ঠিক তেমনি এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
ওজন কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল খাবার খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা।স্থূলতার প্রকাশ অনেকখানি নির্ভর করে পরিবারের জীবনযাত্রার উপর। খাদ্যাভ্যাস পারিবারিকভাবেই গড়ে ওঠে।
চাকুরীজীবিদের ক্ষেত্রে ঠায় বসে কাজ করা সহকর্মীদের সাথে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়া দেহের ওজন বৃদ্ধির কারণ। এছাড়া পায়ে হেঁটে বাড়ি না ফিরে রিক্সা , মোটরসাইকেল বা অন্যান্য যানবাহনে চেপে বাড়ি ফেরা দেহের ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
তাহলে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে দৌড়াদৌড়ি ও হাঁটাহাঁটি করা হয়।
কম দূরত্ব অতিক্রম করার ক্ষেত্রে রিক্সা ও অন্যান্য যানবাহন পরিহার করতে হবে। কম দূরত্ব হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কারণ হাঁটাহাঁটি করলে দেহে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় । ফলে খাদ্যের অতিরিক্ত চর্বি দেহে জমা থাকে না।
বিশ্রামের সময় বাসায় বসে কেবল রিমোট কন্ট্রোল টিভি দেখা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা বা কম্পিউটারে গেম খেলার কারণে কায়িক পরিশ্রমের অভাবে স্থূলতা দেখা দেয়। অবসর সময়গুলো মোবাইল ফোনে ব্যয় না করে হাটাহাটি খেলাধুলা ও কর্মব্যস্ততায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে।
সুষম খাদ্য সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে হবে। অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত ঘুমানো দেহের ওজন বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে 6 থেকে 7 ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।কেউ যদি এর বেশি ঘুমায় তাহলে তার শরীরের ওজন ক্রমবৃদ্ধির হারে বেড়ে যাবে।
সপ্তাহে অন্তত দেড়শ থেকে আড়াইশো মিনিট দ্রুত হাঁটা সাঁতার কাটার অভ্যাস করতে হবে।
মিষ্টি সমৃদ্ধ আহার গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
অ্যালকোহল ও অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ নিষিদ্ধ করতে হবে। অনেক মানুষই নানারকম নেশা জাতীয় দ্রব্য আসক্ত। এ ধরনের দ্রব্য আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এগুলো আমাদের দেহের ওজন বৃদ্ধি করে। এ সমস্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
লোভনীয় খাবারের দিকে হাত বাড়ানো ঠিক নয়।ভুক্তভোগীরা জানোয়ার গ্রহণের সময় তাদের জন্য নির্ধারিত খাবার তালিকা কঠোরভাবে মেনে চলেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত অন্তত একবার নিজের ওজন মেপে দেখতে হবে রুটিন অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের প্রভাব কতখানি সফল হচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদী ফল পেতে হলে খাদ্য ও ব্যায়াম সংক্রান্ত তালিকার প্রতি অটল ও বিশ্বস্ত থাকতে হবে।
কিছু ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা যেতে পারে।স্থূলতা প্রতিকারে মানুষ আজ ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারেও পিছু পা হচ্ছে না। তবে এসবের থেকে সবচেয়ে ভালো উপায় ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করা। অপারেশনের অনেক ঝুঁকি থাকে এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। তাই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং সুস্থ জীবন যাপন করার মাধ্যমে ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়ে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার মাধ্যমে সুন্দর দেহে সুস্থ মন এবং একটি আনন্দময় জীবন পাওয়া যায়।
নারীদের সুস্বাস্থ্যে আলিঙ্গন করা জরুরী।