
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে কিছু তথ্য
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য করার জন্য ষোড়শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত একটি জয়েন্ট স্টক কম্পানি। ১৯৫৮ সালে বিলুপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছিল। এর সরকারি নাম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। পরবর্তীকালে এ কম্পানি ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে কিছু তথ্য
১৬০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের তৎকালীন রানী প্রথম এলিজাবেথ এই কোম্পানিকে ভারতীয় উপমহাদেশ বাণিজ্য করার রাজকীয় সনদ প্রদান করেছিলেন।এ সনদ কোম্পানিটিকে ২১ বছর পর্যন্ত পূর্ব ভারতে একচেটিয়া বাণিজ্য করার অধিকার অর্জন করেছিল। ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসন শুরু করে এরপর। তবে পরবর্তীকালে এই কোম্পানি ভারতের রাষ্ট্রপিতা দখল করে।
পরিপূর্ণ স্থানসহ হুগলিতে বাণিজ্যকুঠি স্থাপিত হয়। ১৬০৮ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনকালে সুরাটে প্রথম বাণিজ্যকুঠি স্থাপনের অনুমতি পায়।
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রতিনিধি জেমস হার্ট ঢাকা প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজ আগমন শুরু হয়। এরপর মুঘল দরবারে থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নিজস্ব মুদ্রার ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। ওই মুদ্রার মুঘল সাম্রাজ্য চালু হয়। ১৭৫৬ সালে মুঘল সম্রাট নবাব সিরাজউদ্দৌলার কলকাতা দখল করে নেয়। এরপর লর্ড ক্লাইভ এবং ওয়াটসন তামিলনাড়ু থেকে জাহাজে করে সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসেন এবং কলকাতা পুনরায় দখল করেন।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে কিছু তথ্য
কোম্পানীর কেরানী পরে ফ্রান্স ইংল্যান্ড যুদ্ধ শুরু হলে সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেন।চন্দননগর দখল করার পরে সিরাজউদ্দৌলাকে উৎখাত করার জন্য সিরাজের পরিবারের কয়েকজন ও মীর জাফর,উমিচাঁদ, জগৎশেঠ, প্রমুখদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। সিরাজউদ্দৌলা নিজের যোগ্যতায় পরে উঁচু পদ পান।
চুক্তিমতো মীরজাফর নবাব হন এবং ক্লাইভ নগদ ৩০ লক্ষ টাকা ও ২৪ পরগনার জমিদারি লাভ করেন। জমিদারির থেকে ক্লাইভের বছরে তিন লক্ষ টাকা আয় হতো। পরে ১৭৬০ সালে ক্লাইভ দেশে ফিরে যান।এদিকে তার অভাবে ইংরেজরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং তখন আবার ক্লাইভের ডাক পড়ে।
ক্লাইম এ দেশে আবার ফিরে আসেন মে মাসে।তিনি তখন দিল্লির বাদশাহ শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-উরিষ্যা এসব স্থানে দেওয়ানি লাভ করেন।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে কিছু তথ্য
বিহার উড়িষ্যার এর প্রকৃত শাসন ক্ষমতা লাভ করে নবাবের নাম মাত্র অস্তিত্ব থাকে।
হলে পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে যে শাসন ব্যবস্থা চালু হয় তা দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত। নবাবের হাতে থাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব আর ব্যায়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। শীতে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে।
এই সুযোগে কোম্পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে অনেক লুণ্ঠন ও অত্যাচার শুরু করে দেয়। এটাই ইতিহাসখ্যাত ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। বহু মানুষ এ সময় খাবারের অভাবে মারা যায়।১৮১০ সালে ভারতে ফ্রী ট্রেড প্রবর্তন হয়। ১৮৪৬ সালে বেসরকারি খাতে চা বাগান স্থাপনের মাধ্যমে এদেশীয় অর্থনীতির স্বনির্ভর সত্তাকে পরনির্ভর করার কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলা নামের এই অঞ্চলটি ধীরে ধীরে ইংরেজরা সম্পূর্ণ করায়ত্ত করার চেষ্টা করে। সেই সাথে ব্রিটিশ সরকার এক চার্টার অ্যাক্ট বলে একচেটিয়া বাণিজ্য করার অধিকার বিলুপ্ত করে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে কিছু তথ্য
পরিশেষে বলা যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে এসেছিল মূলত বাণিজ্য করতে। কিন্তু অবস্থা বুঝে তারা ব্রিটিশ রাজ্যের আনুকূল্যে শাসনকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়। এটাই ছিল বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়কাল এর ইতিহাস।
https://mohajagotik.com/2022/01/03/632/