মুখে অবাঞ্ছিত লোম মেয়েদের সমস্যাটির কারণ ও প্রতিকার জানেন?
সৃষ্টিকর্তা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য নানা রকম উপাদান সৃষ্টি করেছেন। প্রতিনিয়ত নানা রকম হরমোন কাজ করে মানব দেহকে সুস্থ রাখার জন্য এবং প্রতিনিয়ত নানা রকম ক্রিয়া-বিক্রিয়ার সমন্বয় সাধন করার জন্য।
হরমোন এমন একটি উপাদান যা লসিকায় উৎপন্ন হয় দূরবর্তী কোষের কোন অংশের কার্য সম্পাদন করে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হরমোন ক্রিয়া করে। হরমোনের কাজ ও আবার ভিন্ন ভিন্ন। এক এক হরমোন একেক রকম কাজ সম্পাদনের নিয়োজিত।
ঠিক তেমনি ভাবে কোন একটি হরমোনের ক্রিয়া আমাদের চুল দাড়ি এবং লোম গজায়।বিভিন্ন স্থানে অনেক অবাঞ্ছিত লোম দেখা যায়। ছেলেদের প্রাকৃতিকভাবেই দাড়ি ও গোঁফ ওঠে।কিন্তু যখন মেয়েদের মুখেও এরকম লোম দেখা যায় তখন তা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ মেয়েদের মুখ থাকা উচিত মসৃণ ও কোমল। তবেই তা সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে। কোন কারণে মুখের অবাঞ্ছিত লোম সৃষ্টি হলে তার অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এবং লজ্জাজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
আসুন জেনে নেই মুখের এসব অবাঞ্ছিত লোম দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়।
আমাদের একটি অতি পরিচিত ঘরোয়া উপাদান হলো শসা। জেনে অবাক হবেন যে এই শসার রস মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে সাহায্য করে। প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে। মুখটা এমন ভাবে পরিষ্কার করতে হবে যেন কোন রকম ময়লা মুখে আটকে না থাকে। এতে লোমের গোরা হালকা হবে এবং লোম তুলে ফেলা সহজ হবে। এরপর শসা খোসাসহ কেটে নিয়ে মুখে আলতো করে ঘষতে হবে। শসা কাটার পর শসা ধোয়া যাবে না, শসার রস মুখের অবাঞ্ছিত লোমের গোরা হালকা করে । গোড়ায় লাগিয়ে গোড়া ধীরে ধীরে আলগা হয়ে যায়। একসময় লোমগুলো প্রাকৃতিকভাবেই উঠে যায়।
অবাঞ্ছিত লোম তোলার আরেকটি উপায় হল মধু। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সিনিয়র সমান ভূমিকা পালন করে।
মধুর পরিবর্তে চিনি জ্বাল করে ক্যারামেল তৈরি করেও এ কাজ করা যায়।
আমরা মধু দিয়েই ব্যাপারটা আলোচনা করি।
প্রথমে মধু ভালো করে জাল করতে হবে। এমন ভাবে জাল করতে হবে যেন তার খুবই আঠালো ও চটচটে হয়। এরপর সেই আঠালো মধু মুখে লাগাতে হবে। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।যখন দেখা যাবে মধু অনেকটা শুকিয়ে গেছে এবং একটি প্রলেপে পরিণত হয়েছে,তখন মধুর একপাশে ধরে খুবই দ্রুত টান দিয়ে তুলে ফেলতে হবে। দেখা যাবে মধুর প্রদীপের সাথে অবাঞ্ছিত লোম গুলো উঠে এসেছে। তবে এই পদ্ধতি একটু ব্যথাদায়ক। যারা যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেন না, তাদের এই পদ্ধতি অনুসরণ না করাই ভালো।
এছাড়া আরো একটি উপায় হল অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী।
একটি পরিপুষ্ট ঘৃতকুমারী প্রস্থচ্ছেদ করে তা মুখে ভালোভাবে মালিশ করতে হবে। এটি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। দীর্ঘ সময় মালিশ করার পর যখন শুকিয়ে যাবে, তখন আলতো করে একটি তুলা ভিজিয়ে মুখে মালিশ করতে হবে। এতে শুকনা লোমের গোড়া ভেঙ্গে ঝরে পড়বে অথবা তুলোর সাথে উঠে আসবে।
তবে এসব পদ্ধতি কেবলমাত্র খুবই সূক্ষ্ম লোমের জন্য প্রযোজ্য।
যাদের মুখের অবাঞ্ছিত লোম গুলো খুবই মোটা এবং গোড়া শক্ত, তাদের উচিত সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
এক্ষেত্রে কেবলমাত্র হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী ঔষধ ভূমিকা পালন করে। এদের ক্ষেত্রে কোন ঘরোয়া পদ্ধতি প্রযোজ্য নয়।কারণ ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো কেবলমাত্র ওই সকল লোমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেগুলোর গোরাহালকা এবং আকারে সূক্ষ্ম।
অনেক সময় মোটা হওয়ার ঔষধ অথবা ওজন কমানোর ঔষধ সেবন করলে দেহে হরমোনের ক্রিয়া নষ্ট হয় এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে মুখের অবাঞ্ছিত লোম দেখা যায়। এজন্য ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস এর ঔষধ খাওয়া যাবে না।
সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হবে।
মুখের অবাঞ্ছিত লোম দেখা দিলে কোন ভাবেই তার ব্লেড রেজার অথবা কেচী দিয়ে কাটা যাবে না। গজাবে এবং সেই দ্বিতীয়বার গজানো লোমের গোড়া আগের বারের চেয়ে শক্ত হবে। প্রতিবার কাটার ফলে যে নতুন রং হবে তা ক্রমাগত শক্ত হতে থাকবে। লোম চিরতরে তুলে ফেলার কোন উপায় থাকবেনা। মুখের অবাঞ্ছিত লোম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সবার আগে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।এবং ব্লেড দিয়ে অথবা রেজাড় দিয়ে লোম কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে।
অবস্থা গুরুতর হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং হরমোনের ক্রিয়া নষ্ট করে এমন কোন ঔষধ সেবন করা যাবে না।
তবেই অবাঞ্ছিত লোম বিহীন মসৃণ ও সুন্দর চেহারা নিশ্চিত হবে।