মহিলাদের জন্য ঘরে বসে ব্যবসা করার ১০টি ব্যবসার আইডিয়া
নারী ও পুরুষ একে অপরের অংশ। একজনকে ছাড়া আরেকজন মূল্যহীন। তাদের সমান পরিশ্রমে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী। পৃথিবীর অগ্রগতিতে শুধুমাত্র পুরুষ মানুষই নয় ,সমান অবদান রাখছে নারীও ।
কবির মতে,
এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি
চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,
অর্ধেক তার নর।
অর্থাৎ মানবসভ্যতার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমানভাবে নারী ও পুরুষ। বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যবসা-বাণিজ্য চাকুরি ও অন্যান্য কাজে আত্মনিয়োগ করছে।
নারীদের জন্য নিরাপদ একটি পেশা হলো ঘরে বসে ব্যবসা করা।এতে তাদের সময়ের অপচয় হয় না এবং গৃহস্থালির কাজ করার পাশাপাশি অর্থ আয় হয়। বুদ্ধিমতী নারী রা আজ বেছে নিয়েছে ঘরে বসে ব্যবসা করে জীবন জীবিকা নির্বাহ।
খুব সামান্য কিছু বুদ্ধি ও উপায় অবলম্বন করে ঘরে বসে ব্যবসা করে লাভবান হওয়া যায়। অনেক নারী ব্যবসা করে নিজের পিতা বা স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন আর্থিকভাবে।চলুন জেনে নেই ঘরে বসে ব্যবসা করে সফল হওয়ার কিছু উপায়। এসব উপায় ধাপে ধাপে অবলম্বন করে একজন নারী ঘরে বসেই ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারেন।
১. প্রথমত একজন নারীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি কিসের ব্যবসা করবেন। যে সমস্ত দ্রব্যাদির বাজার চাহিদা অনেক বেশি , অর্থাৎ যেগুলো বিপণন বেশি হয় এরূপ দ্রব্যাদি নির্বাচন করতে হবে। দ্রব্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন আশেপাশে কোথাও সহজলভ্য না হয়। যদি ওই দ্রব্য আশেপাশে কোথাও সহজলভ্য হয়, তাহলে ক্রেতারা তার কাছে দ্রব্য নাও নিতে পারে। এমন কোন দ্রব্য নির্বাচন করতে হবে যা আশেপাশে দুর্লভ। এবং যেসব দ্রব্য এর জনপ্রিয়তা বেশি, এসব বিক্রি করা সহজ হয়। এবং চাহিদা বেশি থাকে। ফলে ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায়।
২. এরপর যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো মূলধন বা টাকা। মানুষ ব্যবসা করে প্রতিটি দ্রব্যের উপর কিছু পরিমাণ লাভের উদ্দেশ্যে। ব্যবসার শুরুতেই অতিরিক্ত মূলধন নিয়োগ করা যাবে না। অল্প কিছু মূলধন নিয়োগ করে দ্রব্যাদি কিনে তা বিক্রি করার চেষ্টা করতে হবে।যদি দ্রব্যটি জনপ্রিয়তা বেশি থাকে অর্থাৎ বেশি পরিমাণে বিক্রি হয়,তাহলে পরবর্তীতে বেশি পরিমাণ মূলধন নিয়োগ করে ব্যবসা করা যেতে পারে।তবে শুরুতেই অতিরিক্ত মূলধন নিয়োগ করলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ প্রথমে অল্প কিছু মূলধন নিয়োগ করে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা বাড়াতে হবে। পরবর্তীতে লাভের টাকা সহ নিয়োগ করে ব্যবসার প্রসার করতে হবে।
৩. যে দ্রব্যটি বিক্রয় করার জন্য কেনা হয়েছে, ভালোভাবে ওই দ্রব্যের বিবরণ দিতে হবে।
দ্রব্যটির ভালো দিক সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে। সেই সাথে এমন কিছু তথ্য লিখতে হবে যা দ্রব্য টিকে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। তবে কোনভাবেই দ্রব্য সম্পর্কে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেয়া যাবে না। দ্রব্যটির বিবরণ লিখে দিয়ে সেটে দিতে হবে।
৪. বর্তমানে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য ক্রয় বিক্রয় হয়। কোন একটি দ্রব্য সম্পর্কে ইন্টারনেটে বিবরণ লেখা যায়। একটি অনুচ্ছেদে দ্রব্যের ছবি সহ বিবরণ এবং দাম লিখে পোস্ট করা যায়।এতে কোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ওই দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট হলে এবং কিনতে চাইলে বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে অনলাইনে দ্রব্যটি কিনে ফেলতে পারে। অর্থাৎ দ্রব্য মানুষের কাছে তুলে ধরার একটি ভালো উপায় হলো ইন্টারনেট মাধ্যম।সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দ্রব্য সম্পর্কে লিখে পোস্ট করে দিলে হাজার হাজার ক্রেতা ওই দ্রব্য সম্পর্কে জানতে চাইবে। এতে দ্রব্যটি বিক্রয় করা সহজ হবে।
৫. কোনভাবেই দ্রব্যের উপর অতিরিক্ত লাভ করার চেষ্টা করা যাবে না। কারণ অতিরিক্ত দাম দিয়ে কেউই দ্রব্য ক্রয় করবে না। বরং অধিকাংশ ক্রেতা খুঁজে কোন দ্রব্যটি কম মূল্যে পাওয়া যায়।এজন্য কোন দ্রব্য যে টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি, তার উপর খুবই সামান্য কিছু লাভ রাখতে হবে। এতে দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়বে। আর জনপ্রিয়তা বাড়লে বেশি বেশি দ্রব্য বিক্রয় হবে। হলে লাভ এর টাকার পরিমান একাই বেড়ে যাবে।
৬. যখন দেখা যাবে ব্যবসার প্রসার লাভ করেছে, তখন ক্রয়-বিক্রয় বিপণনের জন্য কিছু লোক রাখা যেতে পারে। যারা সহকর্মী হিসেবে কাজ করবে। এটি করা যাবে কেবলমাত্র তখনই যখন লাভের টাকা নিজের চাহিদা পূরণ করে উপরি কিছু টাকা জমা হয়। তাহলে সহকর্মীদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
৭. এছাড়া বিভিন্ন পোস্টার ব্যানার তৈরি করে তাতে কোনো একটি দ্রব্যের বিবরণ ও আকর্ষণীয় তা তুলে ধরে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া যায়। একটি দ্রব্য পণ্য বিক্রি করার একটি ভালো উপায়। তবে এক্ষেত্রে সহকর্মী আবশ্যক। কারণ শুধুমাত্র একজন নারীর পক্ষে কোনভাবেই এত কাজ করা সম্ভব নয়।
৮. নারীরা ঘরের অনেক সময়ই অবসরে কাটায়। এই অনুষঙ্গ সবসময় বসে নারীরা নানারকম হস্তশিল্পের কাজ করতে পারে। যেমন নকশি কাঁথা, নকশী চাদর, বেতের চেয়ার টেবিল, মোরা , বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন করা কাপড়ের ব্যাগ ইত্যাদি নারীরা হাতে খুব ভালো তৈরি করতে পারে। যদি কোন নারী অবসর সময়ে এসব দ্রব্য তৈরি করে, তাহলে তার দ্রব্য ক্রয় করার জন্য অতিরিক্ত কোনো অর্থ নিয়োগ করা প্রয়োজন হয়না। ফলে, ঐ দ্রব্য বিক্রি করে যত অর্থ আসে, পুরোটাই হলো লাভের টাকা। নারীদের ব্যবসা করার এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র একটি সময় ও পরিশ্রম নিয়োগ করতে হয়। অতিরিক্ত কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না। এছাড়া নকশি কাঁথা বেতের দ্রব্যাদি সহ কারুশিল্পের বিভিন্ন উপাদানের জনপ্রিয়তা খুব বেশি । বড় বড় শপিং বলে এসব দ্রব্যাদি পাওয়া যায় না। ফলে একজন নারী এসব দ্রব্য নিজের হাতে বানিয়ে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হতে পারে।
৯. নারীদের ব্যবসায় লাভবান হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো, ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা।ক্রেতাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও আপ্পায়ন এর মাধ্যমে দ্রব্যাদি পরিবেশন করলে, ক্রেতার মনে ওই বিক্রি করার জন্য সহানুভূতি সৃষ্টি হয়। ফলে, ঐ ক্রেতা অন্যান্য মানুষের কাছে বিক্রেতার সুনাম করে থাকে। সেইসাথে পণ্য দ্রব্যের প্রশংসা করে। একে অনেক মানুষের কাছে ওই বিক্রেতা ও তার পণ্যের সুনাম ছড়িয়ে যায়। এতে একজন নারীর ব্যবসার প্রসার হয়।
১০. ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য সবসময় বুদ্ধিমত্তার পথ বেছে নিতে হবে। ঘরে বসেই ব্যবসায় সফল হওয়া যায় শুধুমাত্র যদি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে মূলধন নিয়োগ করে মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা করা যায়। ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই পণ্যদ্রব্যের মধ্যে ভ্যারাইটি বার বিভিন্নতার রাখতে হবে। কারণ বিভিন্ন চাহিদার মানুষ রয়েছে আমাদের সমাজে। সবার পছন্দ বা চাওয়া-পাওয়া একরকম নয়। বরং বিভিন্ন চাহিদার মানুষ নিয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ।এজন্য ব্যবসা করার সময় অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সমাহার রাখতে হবে। খেতে বিক্রয়ের হার বৃদ্ধি পাবে এবং সেইসাথে লাভ বেশি হবে।
এভাবেই একজন নারী ঘরে বসে
সফলভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। খুবই কম মূলধন বিনিয়োগ করে বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবসা করে সফল হওয়া যায়। এতে দেশের বেকারত্বের হার কমে যায় এবং দেশের উৎপাদনশীল মানুষ বৃদ্ধি পায়। যে নারী ঘরে বসে হলেও কোনো না কোনো উৎপাদনশীল কাজের সাথে জড়িত তিনি দেশের একটি সম্পদ। ব্যবসা করে একজন নারী দেশের বোঝা থেকে দেশের উৎপাদনশীল রত্নভাণ্ডারের পরিণত হতে পারেন।