মানুষ আত্মহত্যা কেন করে??
আত্মহত্যা কথাটির অর্থ হলো নিজেকে হত্যা করা অর্থাৎ নিজের মৃত্যু নিজে ডেকে আনা। এটি একটি গর্হিত অপরাধ।
তবে মানুষ যখন হতাশার চরম পর্যায়ে চলে যায় তখন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
দিনের পর দিন দুঃখ কষ্ট পেতে থাকলে মানুষ বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে।
তাই তখন আত্মহত্যার মতো ভয়ানক পথ বেছে নেয়। মানুষ বিভিন্ন কারণে হতাশায় ভোগে।
পারিবারিক সমস্যা বা বৈবাহিক জীবনের সমস্যা মানুষের জীবনে খুবই স্বাভাবিক।
এ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে পারে না। নিজেকে নিজের কাছে খুবই ছোট মনে হয়। তখন মানুষের মনে হয় এই পৃথিবীর জীবনের চেয়ে হয়তো পরকালের জীবন শান্তির। যদিও তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
যখন একটি মানুষ আত্মহত্যা করে তখন তার মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করে না। কারণ আমরা যাই বলি না কেন একজন মানুষ নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতেই মানুষের শত প্রচেষ্টা।
এত সুন্দর জীবন এত সুন্দর দেহ মানুষ ত্যাগ করতে তখনই চায় যখন সে হতাশার শেষ পর্যায়ে চলে যায়।
লোকেরা বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা যেমন বিষণ্নতা, উদ্বেগ বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার
-পদার্থের অপব্যবহার বা আসক্তি
-দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ব্যথা বা অসুস্থতা
-ট্রমাজনিত জীবনের ঘটনা যেমন প্রিয়জনের হারানো, আর্থিক সমস্যা বা সম্পর্কের সমস্যা
হতাশা, অসহায়ত্ব বা মূল্যহীনতার অনুভূতি
-মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থান বা সহায়তার অ্যাক্সেসের অভাব
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আত্মহত্যা একটি জটিল সমস্যা এবং এটি শুধুমাত্র একটি কারণের ফলাফল নয়। যদি কেউ আত্মহত্যার কথা বিবেচনা করে, তাহলে বিশ্বস্ত প্রিয়জন, মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদার বা সঙ্কটজনক হটলাইনের কাছ থেকে সাহায্য এবং সমর্থনের জন্য পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ।
আত্মহত্যা আরো একটি কারণ হলো কোন সম্পর্ক নিজেকে জড়িয়ে ফেলা।
হয়তো আপনি একজন মানুষকে খুব ভালোবাসলেন কিন্তু সে আপনাকে ধোকা দিল অথবা যেকোনো কারণে আপনাকে ছেড়ে চলে গেল, আপনার মনে কষ্ট দিল, এরকম অবস্থায় আপনি নিজেকে সামলাতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক।
ঠিক এইরকম সময়ে মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
অনেকে বেকার জীবন যাপন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে।
একজন মানুষ যখন চাকরি পায় না তখন পরিবার ও সমাজ তাকে নানাভাবে ছোট করতে থাকে।
বিভিন্ন কথার মাধ্যমে তাকে অপমান করতে থাকে। অনেকেই এরকম অপমান সহ্য করতে পারে না।
তাদের শেষ পরিণতি হয় আত্মহত্যা।
মানুষ আত্মহত্যা কেন করে??
আত্মহত্যাকারী মানুষের মধ্যে মধ্যবয়সী মানুষের সংখ্যায় বেশি।তাদের একটি বড় অংশ হল ছাত্র-ছাত্রী। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো করতে না পেরে আত্মহত্যা করে।
কোন একটি পরীক্ষা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সেই পরীক্ষার জন্য সে দিনরাত এক করে দিয়ে পরিশ্রম করেছে। এতটা পরিশ্রমের পরেও যদি পরীক্ষা খারাপ হয় বা অকৃতকার্য হয় তখন ওই ছাত্র বা ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এছাড়া বাবা মায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ বা পারিবারিক অশান্তি আর্থিক অশান্তি ইত্যাদি কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে।আত্মহত্যা করার সময় সে হয়তো ভাবে তার সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আসলে তা নয়।
আত্মহত্যার মাধ্যমে সেই পদার্পণ করে আরো এক কঠিন জীবনে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধ করার জন্য, গুরুত্বপূর্ণ:
ঝুঁকিপূর্ণ লোকেদের সনাক্ত করুন এবং সমর্থন করুন: সতর্কতা চিহ্নগুলি দেখুন যেমন আচরণ, মেজাজ বা ঘুমের ধরণে পরিবর্তন এবং সেগুলিকে গুরুত্ব সহকারে নিন। সমর্থন অফার করুন এবং তাদের সংস্থান অ্যাক্সেস করতে সহায়তা করুন।
প্রাণঘাতী উপায়ে অ্যাক্সেস হ্রাস করুন: আগ্নেয়াস্ত্র, ওষুধ এবং অন্যান্য সম্ভাব্য প্রাণঘাতী আইটেমগুলি নিরাপদে এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়েছে তা নিশ্চিত করুন।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন প্রদান করুন: যাদের প্রয়োজন তাদের পেশাদার সাহায্য চাইতে উত্সাহিত করুন এবং নিশ্চিত করুন যে তাদের মানসম্পন্ন যত্নের অ্যাক্সেস রয়েছে।
সংযুক্ত সম্প্রদায়গুলি তৈরি করুন: সম্প্রদায়ের সমর্থনকে উত্সাহিত করুন, সামাজিক সংযোগের প্রচার করুন এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি হ্রাস করুন৷
ক্রাইসিস হটলাইন প্রচার করুন: সঙ্কটের হটলাইনগুলিতে অ্যাক্সেস প্রদান করুন এবং যারা সংকটে আছেন তাদের জন্য সহায়তা পরিষেবা প্রদান করুন।
কলঙ্ক হ্রাস করুন: মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মহত্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান এবং চাওয়ার সাথে যুক্ত কলঙ্ক কমাতে কাজ করুন
মানুষ আত্মহত্যা কেন করে??
তাই জীবনে যত বাধা যত দুঃখ কষ্টই আসুক না কেন কখনোই আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া ঠিক না।
ধৈর্য ধরতে হবে এবং নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। হাজার কঠিন পরিস্থিতি আসলেও সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে হবে।
সর্বোপরি নিজেকে ভালবাসতে হবে। মনে রাখবেন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আপনি এই পৃথিবীতে এসেছেন এবং এই পৃথিবী ছেড়ে যাবেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাই।তাই ছোটখাটো দুঃখ কষ্ট মনে তীব্র দাগ না কাটে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আত্মহত্যা মহাপাপ এই বাক্যে সবসময় বিশ্বাস রাখবেন।