স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুখ ও স্বাস্থ্য যেন একে অপরের পরিপূরক। জল স্বাস্থ্য ভালো তার জীবন সুখময়। আর যার শরীর রোগব্যাধিতে পরিপূর্ণ তার জীবন দুর্দশা ও বিষাদগ্রস্ত। স্বাস্থ্য বলতে মোটা শরীরকে বোঝায় না। বরং রোগমুক্ত শরীরকে সুস্থ শরীর বলে। শরীর মোটা বা রুগ্ন যেমনই হোক না কেন, যদি রোগমুক্ত ও সুস্থ থাকা যায় তবেই তা সুস্বাস্থ্য হিসেবে পরিচিত হবে। আমরা অনেকেই মনে করি মোটা শরীর মানে স্বাস্থ্যবান মানুষ। আসলে এটি একটি ভুল ধারণা। একজন মানুষ সুন্দর দেহের অধিকারী হলেও তার শরীরের নানান রকম রোগ বাসা বাঁধার কারণে তিনি অসুস্থ বলে গণ্য হবেন।সবার একজন হালকা পাতলা রোগা শরীরের অধিকারী মানুষ সুস্থ হিসেবে গণ্য হবেন যদি তার শরীরে কোন রোগ না থাকে।
অর্থাৎ স্বাস্থ্য বলতে রোগমুক্ত শরীরকে বোঝায়। তবে বর্তমানে এই রোগ মুক্ত শরীর পাওয়া আমাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। আমরা যেসব খাবার খাই তার বেশিরভাগ খাবারে ফরমালিন বা প্রিজারভেটিভ জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এসব দ্রব্য আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘমেয়াদী এসব খাবার খেতে থাকলে হৃদপিন্ডের বিভিন্ন সমস্যা, পাকস্থলী নানারকম সমস্যা, এছাড়া ক্যান্সার হতে পারে।
আজকে আমরা জেনে নিব সুস্থ থাকার জন্য দশটি স্বাস্থ্যকর খাবারের নাম। সেইসাথে জানবো সেগুলো গ্রহণের কলাকৌশল।
সেরা ১০টি স্বাস্থ্যকর খাবার আপনাকে অবশ্যই খেতে হবে
১. শরীরে শক্তি আনার এবং শরীরের বীপাকীয় কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার হলো দুধ। দুধের মধ্যে সমস্ত পুষ্টি উপাদান সঠিক অনুপাত এ বিদ্যমান থাকে।মানুষের প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করার জরুরী। তবে অতিরিক্ত দুধ খেলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা হতে পারে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের অতিরিক্ত ঘন দুধ দুধের সর খাওয়া যাবেনা। বড় দুধের মধ্যে কিছুটা পানি মিশিয়ে, দুধের ঘনত্ব কমিয়ে পান করতে হবে।শিশুদের ক্ষেত্রে দুধপানের কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই। শিশুরা ইচ্ছে মতো ঘন বা হালকা দুধ খেতে পারে।
২. দেহকে সুস্থ রাখার জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হলো ডিম। ডিম একটি স্নেহজাতীয় খাবার। বিশেষ করে ডিমের কুসুম পুরোটাই স্নেহ।ডিম মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করে।সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষের প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া জরুরি।তবে একইভাবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের নিয়মিত ডিম খাওয়া ঠিক নয়। উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যার রোগীরা তিনদিন পর পর একটি ডিম খেতে পারেন।
৩. শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য কলা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা দেখা দিলে কলা ভালো ফলাফল দেয়। তবে অতিরিক্ত কলা খেলে গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা হতে পারে। জন্য নিয়মিত কিন্তু পরিমিত পরিমাণে কলা খেতে হবে।
৪. শরীর সুস্থ রাখতে হলে একজন মানুষের অবশ্যই শাক জাতীয় খাবার খেতে হবে।সাক জাতীয় খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণের উপর কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বরং একজন মানুষ তার চাহিদা মতো শাক খেতে পারেন। আমাদের দেশে উর্বর জমিতে অনেক রকম শাক জন্মায়। প্রতিবার খাদ্য তালিকায় কিছু পরিবহন শাক রাখা জরুরি। তবে রাতে ঘুমানোর আগে শাক না খাওয়াই ভালো।
৫. সুস্বাস্থ্যের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হল মধু। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর হালকা গরম পানিতে এক চামচ মধু দিয়ে খেয়ে নিলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায় এবং অন্যান্য অসুখ-বিসুখ আক্রমণ করতে পারে না। তাই নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু প্রযোজ্য নয়।
৬. শরীরের বিভিন্ন খারাপ অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ হলো কালোজিরা খাওয়া। ৭০ রকমের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম এই কালোজিরা। ঘুম থেকে উঠে দিনের যেকোনো সময় কিছু পরিমাণ কালোজিরা নিয়ে শুকনো অবস্থায় খেয়ে পানি খেয়ে নিলে তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কালোজিরা দামে কম এবং সবার জন্য সহজলভ্য।
৭. এছাড়া পেঁপে আমাদের শরীরের জন্য একটি উপকারী সবজি। তেতুল খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি মহা ঔষধ।এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসকেরা একটি নির্ধারিত পরিমাণ খাবার খাওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকে। অনেক সময় খাবার খাওয়ার পরেও রোগী পেটে ক্ষুধা থেকে যায়। এমন অবস্থায় পেঁপে একটি ভালো খাবার। পেঁপে খাওয়ার কোন নির্ধারিত সীমা নেই।তাই যখন খুশি পেঁপে কাঁচা অথবা পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এটি একটি অতি উপকারী সবজি। পাকার পর একটি ফল হিসেবে খাওয়া হয়।
৮. শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য এবং কাজ করার সামর্থ্য লাভের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে একবার গরু বা খাসির মাংস খেতে হবে।উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল ও শক্তি উপাদান থাকে। এটি আমাদের প্রতিদিনের পরম শক্তি যোগায়। দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে গরুর মাংস অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। একটি নির্ধারিত পরিমাণ এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর গরুর মাংস বা খাসির মাংস খেতে হবে।
৯. স্বাস্থ্যের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হলো মাশরুম। অনেক এলাকায় একে ব্যাঙের ছাতা বলা হয়। মাশরুম একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। বহুমূত্র রোগীদের জন্য এটি একটি ঔষধ। মাশরুম চাষ করা খুবই সহজ এবং দামে কম। আমাদের দেশের কিছু কিছু এলাকায় মাশরুম প্রাকৃতিকভাবেই জনমে। তবে কিছু কিছু মাশরুম প্রজাতি বিষাক্ত ও খাওয়ার উপযোগী নয়। এজন্য বাজার থেকে খাওয়ার উপযোগী ও উপকারী মাশরুম কিনে রান্না বা সিদ্ধ করে খেতে হবে। মাশরুম খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
১০. এছাড়া ঋতুকালীন ফল যেমন আম জাম কাঁঠাল পেয়ারা জামরুল নাশপাতি লিচু বেল ইত্যাদি আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রঙিন ফলমূল খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। খারাপ রোগ ব্যাধি থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ঋতুকালীন ফল খেতে হবে। দেহের ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে আম। যারা রুগ্নতায় ভুগছেন, তারা দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চারটি আম খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যাবে।
ঘরে বসে মিষ্টি দই তৈরির সহজ রেসিপি