আমাদের জীবনে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ কেন
আমাদের জীবনে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ কেন ? কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কৃষি। আমাদের জীবনে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রাম অঞ্চলে বাস করে এবং তাদের প্রধান পেশা হলো কৃষিকাজ। অনেক শহরের লোক কৃষি কাজ কে ঘৃণা করে। তারা ভাবে মূলত গরিব মানুষেরা কৃষিকাজ করে। তবে তারা এটা ভুলে যাই যে তারা যে ভাত খেয়ে অফিসে যায়, সেই ভাতের চাল একজন কৃষক ফলায়। কৃষি ছাড়া আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ।
যদি কৃষি না থাকতো, কৃষকরা যদি চাষাবাদ না করতো আমরা না খেয়ে মারা যেতাম। আমাদের সবাইকে কৃষির গুরুত্ব বুঝতে হবে। আমাদের দেশের কৃষকরা চাল ডাল গম ভুট্টা ইত্যাদি জমিতে চাষ করে থাকে। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তারা এ কাজ করে। সারা বছর পরিশ্রম করে তারা মাঠে সোনার ফসল ফলায়। আমাদের জীবনে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ কেন সেই ফসল বাজারজাত করে যে সামান্য অর্থ আয় করে তা দিয়ে তারা সংসার পরিচালনা করে।
আর আমরা বাজার থেকে সরাসরি চাল-ডাল কিনে তা গ্রহণ করি। যদি কৃষিকাজ না হতো তাহলে এসব খাবার আমরা কোথা থেকে পেতাম? মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত , বিশেষ করে বাঙালিরা ভাত খেয়ে বাঁচে। ভাতের সাথে আমরা মাছ মাংস ডাল তরকারি শাকসবজি ইত্যাদি খাই। এমন কোন খাবার নেই যা জমিতে ফলানো হয় না। আমরা যে মাছ মাংস খায় তার জেলেরা চাষ করে। আমাদের শরীরে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে শাকসবজি যা কৃষকেরা মাঠে চাষ করে থাকেন।
আমাদের শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে বিভিন্ন রকম ডাল এর প্রয়োজন হয় যা একজন কৃষক মাঠে চাষ করে থাকেন। আবার কৃষকদের চাষকৃত ধান থেকে চাল হয় যা আমরা গুঁড়া করে পিঠা তৈরি করি এবং শীতকাল সহ বিভিন্ন পালা-পার্বণে এই তৈরি কৃত পিঠা খাওয়া হয়। কৃষকরা আবার মাঠে ভুট্টা চাষ করে থাকেন যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।কৃষকেরা মাঠে সরিষা চাষ করে থাকেন যা থেকে আমরা সরিষার তেল সরিষার দানা ইত্যাদি পেয়ে থাকি। কৃষিক্ষেত্রে আবার অনেক কৃষকদের কৃষি বাদাম ইত্যাদি ও চাষ করতে দেখা যায়।এগুলো আমাদের শরীরের জন্যে অনেক প্রয়োজনিয়।সবজি চাষের মধ্যে কৃষকরা আলু ,গাজর, মুলা ইত্যাদি চাষ করে থাকেন যা আমাদের শরীরের জন্য অসম্ভব উপকারী।
চট্টগ্রাম-সিলেট ইত্যাদি অঞ্চলের কৃষকেরা চা চাষ করে থাকেন। চা এমনিতেও একটি সুস্বাদু পানীয়, তবে বর্তমানে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে,মশলা চা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য অধিকতর উপকারী। কৃষকেরা আবার জুম চাষ করে থাকেন। যেসব এলাকার মাটি স্ট্রবেরি উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী সেসকল এলাকার কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষ করে থাকেন। স্ট্রবেরি একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। অনেক এলাকার কৃষকরা আবার ড্রাগন ফল চাষ করে থাকেন যা অত্যন্ত সুস্বাদু। আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের জীবনে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ কেন ?কৃষিকাজ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই কৃষি নির্ভর।তারা কৃষি কাজের মাধ্যমেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।আমাদের দেশে চাষকৃত বিভিন্ন ধরনের সবজি বিদেশে রপ্তানী করার মাধ্যমে আমরা প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। তাতে আমাদের দেশের অর্থনীতি আরো উন্নত হবে। আমাদের দেশ আরো স্বাবলম্বী হতে পারবে। আমাদের শারীরিক ক্ষেত্রেও কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। চাষকৃত শাক সবজি এবং ফল ফলাদি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। চাষকৃত শাকসবজি গ্রহণ করার ফলে আমাদের ইমিউনিটি অনেক শক্তিশালী হয় ফলে আমরা যে কোনো ছোটখাটো রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ি না।
কৃষির মূল কথা এই যে, কৃষি আমাদের জীবনে অনেক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে, সুস্থ থাকতে, রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে, দেশকে স্বাবলম্বী করতে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে কৃষির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
এটা সত্য যে জিডিপিতে সামগ্রিক কৃষির অবদান (শস্য, বন এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ নিয়ে গঠিত কৃষি-কৃষি খাত) আগের তুলনায় অনেক কম। স্বাধীনতার প্রথম দশকে জিডিপির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এসেছে কৃষি থেকে। এখন তা ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
যদিও জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান হ্রাস পেয়েছে, তবুও কৃষি এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান কার্যকলাপ এবং প্রাণশক্তি (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮)। তাছাড়া সামগ্রিক জিডিপিতে কৃষির একটি পরোক্ষ অবদান রয়েছে। খাতটি পাইকারি ও খুচরা বিপণন, হোটেল এবং রেস্তোরাঁ এবং পরিবহন, স্টোরেজ এবং যোগাযোগের বৃদ্ধিতে বিশেষ করে বৃহত্তর পরিষেবা খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
স্বাধীনতার প্রথম দশকে, দেশের মোট জনশক্তির ৭৫% কৃষিতে নিয়োজিত ছিল (দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা: ১৯৭০-৭৫)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, কৃষিতে নিয়োজিত জনবল ৪০.৬ শতাংশে নেমে এসেছে কিন্তু স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হওয়ায় কৃষিতে শ্রমশক্তির সংখ্যা কমেনি। সম্প্রতি প্রকাশিত কৃষি শুমারি-২০১৯-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট পরিবারের ৪৮.৬১ শতাংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে ৫৩.৭২ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় এবং ১০.৪৭ শতাংশ শহরে বাস করে। বরিশাল ৬, চট্টগ্রাম ৪৪.৯৪, ঢাকা ৩০.৮৯, খুলনা ৫৪.৪৮, ময়মনসিংহ ৫৫.৭৫, রাজশাহী ৫১.১১, রংপুর ৫৫.৪৬ এবং সিলেট ৪৯.৯৮ শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায় আমাদের জীবন ও অর্থনীতিতে কৃষি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষি নির্ভরতা মানে জমির উপর নির্ভরশীলতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবাদি জমির পরিমাণও কমছে। ২০১১ সালের শেষ পঞ্চম আদমশুমারিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী সাড়ে আট কোটি জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ কোটি ২৫ লাখ ১৬ হাজার। পরবর্তী ষষ্ঠ আদমশুমারি ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হবে।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ। বিবিএস-এর লেবার ফোর্স সার্ভে-২০১৬-১৭ অনুযায়ী, দেশের মোট ১০৯ মিলিয়ন শ্রমিকের ৫৩.৫% এর বয়স ১৫-৩৪ বছরের মধ্যে। তারা একাধিক সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম। এর মানে হল যে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার অদূর ভবিষ্যতে ১.৩৬ শতাংশ থেকে কমবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশের জনসংখ্যা একদিকে যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। সত্তরের দশকের শেষদিকে প্রণীত দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮৬-৮০) বলা হয়েছে, দেশে কৃষি জমির পরিমাণ প্রায় ৯০ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর।
তৃতীয় বার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৮৫-৯০) বলে যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের মাথাপিছু ভূমির পরিমাণ সবচেয়ে কম। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-১৫) বলে যে কৃষি জমির অত্যধিক ব্যবহার এবং নদী ভাঙনের কারণে মাথাপিছু জমির প্রাপ্যতা হ্রাস পাচ্ছে এবং কৃষি জমির পরিমাণ প্রতি বছর প্রায় ১ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। বিবিএস এগ্রিকালচারাল স্ট্যাটিস্টিক্স ইয়ারবুক-২০১৬ অনুযায়ী, দেশে মোট আবাদি জমি কমেছে ৭৫.৬ লাখ হেক্টর।
1.কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ অকৃষি খাতে এর ব্যবহার। সূত্রের খবর, জমি ও কৃষি জমি রক্ষায় রাজ্যের কোনও ব্যাপক পরিকল্পনা নেই৷ ফলে অপরিকল্পিতভাবে বড় আকারের কৃষি জমি অকৃষি খাতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। যেসব কৃষিজমি অকৃষি খাতে স্থানান্তর করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে আবাসন, কারখানা স্থাপন, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ। তবে কৃষি জমির বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে আবাসন খাতে এবং বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে।
2.২০১৩ সালে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গ্রামীণ এলাকায় আবাসন খাতে কৃষি জমি ব্যবহারের চাপ কমাতে ‘পল্লী জনপদ’ নামে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে। দেশের তৎকালীন ৬টি বিভাগের একটি করে গ্রামে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্প এলাকায় স্বল্প পরিমাণ জমিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত চারতলা ভবন নির্মাণ এবং প্রকল্প এলাকায় হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খামার স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শেষ তারিখ ২০১৬ সালের জুন নির্ধারিত ছিল, কিন্তু এটি দিনের আলো দেখেনি।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশে পরিবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার, যা ২০০১ সালের আদমশুমারির ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার (বৃদ্ধির হার ২৬.২২ শতাংশ) থেকে ৮০ লাখ ১৩ হাজার বেশি। ২০২১ সালের আদমশুমারিতে, বসতবাড়ির সংখ্যা সাড়ে ৪ কোটিতে পৌঁছতে পারে।
শিল্প খাতেও কৃষি জমি হস্তান্তরের ঘটনা ঘটছে। এটা সত্য যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। জিডিপিতে শিল্পের অবদান কৃষির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি (৩৩ শতাংশ)। শিল্পায়নের মাধ্যমে আমরা আধুনিক জীবনের প্রয়োজনীয়তা পাই।
You have to wait 30 seconds.